ময়মনসিংহে কেওয়াটখালী সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ: হাইকোর্টে রিট দায়ের
ঢাকা, ১৩ জুলাই ২০২৫: ময়মনসিংহের স্বপ্নের কেওয়াটখালী স্টিল আর্ট ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্পে নকশা পরিবর্তন করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যয় এবং যানজটের নতুন ক্ষেত্র তৈরির অভিযোগ উঠেছে। 'সদাজাগ্রত ময়মনসিংহ' এবং 'ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলন'-এর পক্ষ থেকে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়। ময়মনসিংহবাসীর পক্ষে আবুল কালাম আল আজাদ এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একনেক কর্তৃক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ৩,২৬৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২৫ সালের জুনে কেওয়াটখালী স্টিল আর্ট ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এই সেতু নির্মাণ হলে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও শেরপুরের কয়েক কোটি মানুষের ঢাকা ও অন্যান্য জেলায় যাতায়াত সহজ হতো। এমনকি, ১৫৫ বছর পুরনো রেলসেতুটিও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় সড়ক সেতুর সাথে রেলওয়ে যুক্ত করারও দাবি ছিল, যদিও একনেক অনুমোদিত নকশায় রেলপথ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
তবে অভিযোগ উঠেছে যে, অনুমোদিত নকশার বাইরে শম্ভুগঞ্জ চায়না মোড়ে ২৩০০ মিটার বাঁকা ইংরেজি 'J' আকৃতির একটি ওভারপাস নির্মাণের কাজ চলছে। এই অস্বাভাবিক বাঁকা ওভারপাসটি পুরনো চায়না সেতুর সংযোগ সড়কে গিয়ে মিশেছে, যা বিদ্যমান যানজটকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নকশা বহির্ভূত এই নির্মাণকাজের জন্য একটি খাল, সাতটি জলাশয়, কৃষিজমি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ৬৫টি কবরস্থান, দোকানপাট ও কারখানা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত ৩২ একর ভূমি অধিগ্রহণ করতে হচ্ছে এবং ৩০ ফুট উঁচু প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করতে হচ্ছে। এর ফলে মূল বাজেটের অতিরিক্ত ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে, যা দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে আরও দুটি সেতু নির্মাণ সম্ভব বলে বক্তারা জানান। এই বিপুল অর্থের অপচয় এবং যানজট সৃষ্টির পেছনে আবাসন প্রকল্প ও দুর্নীতির যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ময়মনসিংহের ভুক্তভোগী জনতা এই অনিয়মের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ জানালেও স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার মেলেনি। উল্টো, অভিযোগকারী এবং আন্দোলনকারীদের হুমকি, হামলা ও মামলার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি কমিটি সদস্যরা সরেজমিন তদন্ত করলেও, অদ্যাবধি তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি।
অবশেষে, ময়মনসিংহবাসী বাধ্য হয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন।
আবুল কালাম আল আজাদ বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য' মামলায় ৪ জুন ২০২৫ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট রুলনিশি জারি করে ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী সেতুর নির্মাণ কাজ শুধুমাত্র একনেক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী চালাতে এবং নকশা বহির্ভূত কাজ বন্ধ করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা দ্রুততম সময়ে সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানান এবং শম্ভুগঞ্জ সংযোগ সড়কটি এমনভাবে নির্মাণের আহ্বান জানান যেন দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক একটি না হয়। একই সাথে, গোষ্ঠী স্বার্থে নির্মাণাধীন সব কাজ অবিলম্বে বন্ধ করার জোর দাবি জানানো হয়।
