তথ্য আপা: প্রকল্প (২য় পর্যায়) এর জনবলের প্রতি হওয়া বৈষম্য ও দাবি সমুহের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য-প্রেস ব্রিফিং

প্রেস ক্লাবে আয়োজিত আজকের এই প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সাংবাদিকবৃন্দকে এখানে উপস্থিত হয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।



আমরা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) যা সারাদেশে তথ্য আপা নামে পরিচিত তার সকল জনবলের পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছি আমাদের কিছু দাবী নিয়ে।

আমরা মাঠ পর্যায়ে বিগত প্রায় ৭ বছরেরও অধিক সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য।



কিন্তু অতান্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি আর ১ মাস পরে আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই ১৫০০ নারী এক যোগে থেকার হয়ে পরবে। যারা নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে এই প্রকল্পের অর্জন ৯০% করেছে তারাই আজকে ক্ষমতাহীন হওয়ার পথে।

জুনের পর থেকে এই ২০০০ জনবল এবং তাদের পরিবার এক অসহনীয় দুর্দশায় পতিত হতে যাচ্ছে।

১। আমাদের নিয়োগ পদ্ধতি

২। আমাদের কার্যক্রম ৪৯২ টি উপজেলায়

৩। নিয়োগপত্র অনুযায়ী বেতন না দিয়ে বেতন কমিয়ে দেয় সাবেক পিডি জনাব মিনা পারভীন স্যার। (বেতন কমানোর সাপেক্ষে কোনো লিখিত চিঠি প্রদান করা হয়নি।)

৪। রাজস্বের আশ্বাস দিয়েও কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।



৫। মন্ত্রণালয় নিজেদের সুবিধার্থে ১ম ডিপিপি যেখানে প্রকল্প শেষে জনবলের রাজস্বখাতে স্থানান্তরের বিষয়টি উল্লেখ করা ছিলো সেটি তৎকালীন পিডি জনাব মিনা পারভীন স্যার পরিবর্তন করেন।

৬। ২ বার অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পদ সৃজনের চিঠি চাওয়ার পরও পিডি স্যার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উল্লেখ্য যে, প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি নারীকে সেবা প্রদান করা হলেই পদ সুজনের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিলো।

৭। প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ১০০% অর্জিত হয়েছে, প্রকল্পের সফলতার হার ১০%+ এরপরও আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে পদ সৃজনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

৮। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির চিঠি না পাওয়ায় এবং রাজস্বকরণের দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচির প্রেক্ষিতে তৎকালীন সচিব নাজমা মোবাকর স্যার পিডি স্যারকে পদ সৃজনের চিঠি লেখার কথা বলেন এবং পরিকল্পনা উপদেষ্টা জানান আমাদের পরীক্ষামূলক ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে যেহেতু আমরা জনগনের দোরগোড়ায় যাই এবং পরবর্তীতে ১ বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য আমাদের রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া হয়।

৯। আমাদের ৬ মাস বেতন বন্ধ থাকে এবং কোন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়নি। জানুয়ারি/২০২৫ খ্রিঃ থেকে উঠান বৈঠকে রিসোর্স পার্সন হিসেবে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসারকে সংযুক্ত করে দেয়া হয় যাতে করে তৃণমূল মহিলাদের পরিবার পরিকল্পনা ও "মা ও শিশু স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আমাদের কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়নি।

১০। এর পরবর্তীতে জানুয়ারিতে আমরা জুন ২০২৫ মাসে অফিস ছাড়ার নির্দেশনা পাই। যেহেতু নিয়মে আছে প্রকল্প শেষ হওয়ার অদ্ভুত ৬ মাস পূর্বে পদ সৃজনের চিঠি দেয়া যায় তারই প্রেক্ষিতে আমাদের পিডি স্যারকে অনুরোধ জানাতে এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে আমরা ৭০-৮০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী প্রধান কার্যালয়ে যাই। এক পর্যায়ে পিডি মহোদয়ের হাত পা ধরে পর্যন্ত মেয়েরা কান্নাকাটি করে। এর ফলে পিডি মহোদয় আমাদের সচিব মহোদয়ের সাথে ঐ দিন দেখা করার আশ্বাস প্রদান করে কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখেও আমাদের সাথে সচিব স্যারের সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গড়িমসি করে এবং বলে আমরা তোমাদের জন্য কোনো কাজ করতে পারবো না।

তোমরা চাইলে আমাদের পদত্যাগ করাও। এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হওয়ায় পরবর্তীতে সচিব স্যার ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শ্রদ্ধেয় উপদেষ্টা জনাব শারমীন এস মুরশিদ স্যারের সাথে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভায় আমরা উপদেষ্টা মহোদয় কে জানিয়েছিলাম বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এই প্রকল্প সমাপ্ত করে ৩য় ফেজ আউটসোর্সিং করে নতুনভাবে নিয়াগ বাণিজ্য করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলো যা আমরা কখনও চাই না।

আমরা ৩ ধাপে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে এখানে কেউই আউটসোর্সিং এ যাওয়ার পক্ষপাতি নই।

১৪। এছাড়াও ২২ ফেব্রুয়ারি মহিলা বিষয়কের উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে আলোচনান্তে স্যারকে আমরা ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল অডিটের কথা বলি। স্যারও অডিটের বিষয়ে সহমত পোষণ করেন কিন্তু এখন পর্যন্ত অডিটের কোনো বাবস্থা করা হয়েছে কিনা এটা আমাদের জানা নেই বা আমাদের জানানো হয়নি। বিগত কয়েক মাসে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে আমাদের পদ সৃজন করে রাজস্বখাতে। স্থানান্তরের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করে চিঠি প্রদান করলেও কোনো লাভ হয়নি।

১৫। আমাদের প্রধান কার্যালয়ের দুর্নীতির প্রমাণকসহ (যেমন- নাইটগার্ড এর নিয়োগ না হওয়া স্বত্তেও নাইটগার্ড এর বেতন দুই অর্থবছর উত্তোলন করা হয়েছে বর্তমান সরকার আসার পর এই অর্থবছর নাইটগাড়ী-এর বেতন উত্তোলন করা হয় নাই) ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন দুদক এবং কয়েকটি মন্ত্রণালেয়ের উপদেষ্টা মহোদয় বরাবর দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে আমাদের নজরে আসেনি।

১৬) এখানে একটা বিষয় আমাদের জানিয়ে রাখা দরকার যে, ২২ ফেব্রুয়ারি আমরা যে ৬৪ জন উপস্থিত ছিলাম বিশেষ করে আমাদের মধ্যে যারা সম্মুখ সারিতে থেকে বিভিন্ন বৈষমোর কথা বলেছে পরবর্তীতে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ই-কমার্স বিষয়ক সেমিনার গুলোতে তাদেরকে রাখা হয়নি। এতে করে সেসব কর্মকর্তা ও সহকারীদের সাথে সাথে ঐ উপজেলার নারী উদ্যোক্তারাও উক্ত সেমিনার থেকে বঞ্চিত হন। যাদের সাথে এটি করা হয়েছে স্পষ্টতই এটি তাদের সাথে উদ্দেশ্যমূলক বৈষমা করা হয়েছিলো।

সুতরাং আজকে আমরা যারা এখানে আছি, বিভিন্ন বৈষম্যের কথা প্রকাশ্যে এনেছি এরপর তাদের সাথেও বিভিন্ন বিধিবিধানের কথা বলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

আমাদের দাবীসমূহ:

১। আমাদের প্রকল্পে কর্মরত সকল জনবলকে সমগ্রেডে পদসৃজনপূর্বক রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে।

২। যেহেতু রাজস্বখাতে স্থানান্তরের জন্য সময়ের প্রয়োজন তাই প্রয়োজনীয় সময় ৩-৫ বছর প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা।

৩) পদসৃজন করে রাজস্বখাতে স্থানান্তর সম্ভব না হলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শূন্যপদের ভিত্তিতে সমগ্রেডে আত্তীকরণ করা।

৪) আমাদের কর্তনকৃত বেতন ও ভাতা গুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post