বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থান: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার 'অহিংস বাংলাদেশ'
ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৪:
৫ আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে ধারণ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ' দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা নিয়ে মাঠে নেমেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক সংহতি সমাবেশে বক্তারা আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত লাগামহীন দুর্নীতি, অর্থপাচার এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার কঠোর সমালোচনা করেন। একইসাথে, তারা দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে 'অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা' শীর্ষক একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
সমাবেশের প্রেক্ষাপট: এক গণরোষের ধারাবাহিকতা ২০২৪ সালের ৫ জুন কোটা সংস্কার আন্দোলন পুনরায় শুরু হয়ে ২ জুলাই 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে' রূপান্তরিত হয়। এই আন্দোলনই ৩ আগস্ট সরকার পদত্যাগের এক দফা সর্বব্যাপী গণআন্দোলনে পরিণত হয়, যার ফলশ্রুতিতে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান নিয়ামক ছিল আওয়ামী সরকারের সকল রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সংঘটিত অবিরাম দুর্নীতি, অনিয়ম ও অর্থপাচার।
উপস্থিত ছিলেন যারা সংহতি সমাবেশে 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'-এর কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট নাগরিক, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, তরুণ সমাজ, ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন জনতা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখযোগ্য অতিথিবৃন্দদের মধ্যে ছিলেন:
জনাব বাচ্চু ভূইয়া– কেন্দ্রীয় নেতা, গণসংহতি আন্দোলন সরদার মোঃ আব্দুস সাত্তার – চেয়ারম্যান, গণ অধিকার পার্টি – পিআরপি আলহাজ্ব মোঃ আব্দুর রহিম – চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ঐক্য পরিষদ ব্যারিস্টার শহিদুল আজম – সাংগঠনিক সম্পাদক, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) হানিফ বাংলাদেশী – বিশিষ্ট মানবাধিকার ও সমাজকর্মী মোহাম্মদ শামসুদ্দিন – আহ্বায়ক, নাগরিক পরিষদ মোঃ মনজুরুল ইসলাম তরফদার, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, গ্লোবাল লিগ্যাল রাইটস ফাউন্ডেশন অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'-এর সিনিয়র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান। ---
দুর্নীতির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বক্তারা জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের সাথে সংহতি জানিয়ে বলেন, ৩ আগস্ট ছাত্র নেতৃত্ব ঘোষিত এক দফার ভাষা ছিল: ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কায়েম। তারা প্রশ্ন তোলেন, কেন একদা বিপুল ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী সরকার চরমভাবে ধিকৃত এবং প্রত্যাখ্যাত হলো? এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ।
বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কেবল কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল না, বরং এটি ছিল এক প্রকট রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অসন্তোষের প্রেক্ষাপট। ছাত্রদের প্রতিবাদ ছিল ক্রমবর্ধমান স্বৈরাচারী, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বৃহত্তর অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। কেবল কোটা সংস্কার নয়, অর্থনৈতিক অসন্তোষ, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, অর্থ পাচার, দুর্নীতি, বেকারত্বের গ্লানি এবং দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক নিপীড়ন এই আন্দোলনে গতিবেগ দান করে। ---
চোরতন্ত্র' ও অর্থপাচার: এক ভয়াবহ চিত্র অভ্যুত্থান পরবর্তী অর্থনৈতিক বিষয়ক শ্বেতপত্র কমিটির বরাত দিয়ে বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সত্যিকার অর্থে একটি 'চোরতন্ত্র' প্রতিষ্ঠা করে হরেক রকম পদ্ধতিতে দুর্নীতি করে দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছে। উন্নয়নের বয়ানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অন্তত ২৮ রকম উপায়ে দুর্নীতি সংঘটনের তথ্য খুঁজে পেয়েছে কমিটি। বক্তাদের মতে, আইনসভা, বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই যখন গোষ্ঠীবদ্ধভাবে চুরির অংশ হয়, তখনই 'চোরতন্ত্র' প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী আমলে রাজনীতিক, আমলা ও ব্যবসায়ী – এই তিন সহযোগী সৃষ্টি করা হয়।
বক্তারা আরও বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যে টাকা পাচার হয়েছে, তা দেশের মানুষ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে থেকে যাবে। ধারাবাহিক ঋণ খেলাপের ঘটনা এবং বড় ধরনের কেলেঙ্কারিগুলো আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে পুঁজি অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে গেছে। অর্থনীতির সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার কাঠামোগত সংস্কার ও জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়া এ থেকে উত্তরণের উপায় নেই। বক্তারা সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত বিবরণ জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানান।
'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'-এর সংগ্রাম ও প্রস্তাবনা ### তৃণমূলে জনমত গঠন ও নির্যাতন 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'-এর ময়মনসিংহ সংগঠক ফরহাদ জানান, আওয়ামী মিডিয়া ও দলীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের চাপে যখন বিরোধীমত প্রায় কোনঠাসা, মামলা-হামলা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন, গুমের ভয়ে শহুরে সমাজ যখন প্রায় বাকরুদ্ধ, তখন আ.ব.ম. মোস্তাফা আমীনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'। এটি দেশের একটি বৃহৎ সামাজিক অধিকার সংগঠন, যারা এ পর্যন্ত ৪০ জেলায় তাদের প্রস্তাবিত
অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা"
শীর্ষক একটি বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবীতে ও দুর্নীতি বিরোধী জনমত গড়তে তৃণমূলে ১ কোটি ৮০ লক্ষ অনুস্বাক্ষর গ্রহণ করেছে। অহিংসের নারায়ণগঞ্জ সংগঠক আমির হোসাইন জানান, এই কাজ করতে গিয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ২০২২-২৩ সালে ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী পেটুয়া বাহিনী দ্বারা হামলা, মামলা (৩টি), সমাবেশ পন্ডসহ বিবিধ ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়।
বর্তমান সরকারের আমলেও ভোগান্তি অহিংসের সংগঠক নাসরিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গত ২৫ নভেম্বর শাহবাগে এক দুর্নীতি বিরোধী গণ জমায়েত করতে গিয়ে নবীন সরকারের ভ্রান্ত ধারণায় বশবর্তী হয়ে ১৫০ এরও অধিক নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে অজ্ঞাতপরিচয় ২৫০০-৩০০০ জন আসামি করা হয়েছে। আরও আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ৭টি মামলায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারা ১৫(৩)/২৫(ডি) প্রয়োগ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে ৩৬ জনই নারী এবং সকলেই গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। আনুমানিক ১০০ জনেরও অধিক গ্রেফতার ও কারাবাসের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে আড়াই বছরের মেয়ে শিশু মারিয়ামকে নিয়ে এক মা দেলোয়ারা কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি প্রিজনে (৩ মাস), শারীরিক প্রতিবন্ধী পঞ্চাশোর্ধ মহিলা ও তার স্বামী (৩ মাস), মানসিক প্রতিবন্ধী অটিস্টিক পুরুষ (কারাবাস চলমান), গ্রামের খেটে খাওয়া মজুর, গাছি, মাংস বিক্রেতা, অটোচালক, ফল বিক্রেতা, মাদ্রাসার হুজুর, প্রান্তিক উদ্যোক্তা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী – সকলেই ১-৩ মাস কারাবাস যাপন করেন। গ্রামের নিরীহ পুরুষ-মহিলারাও ৩০ হাজার থেকে ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত উকিলদের 'প্যাকেজ বাণিজ্যে' জামিন নিয়েছেন। অনেকে উকিল নিয়োগ করতে না পারায় এখনো কারাগারে। সকল সংগঠক অবিলম্বে এই মামলাগুলো বাতিলের দাবি জানান।
অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা': এক যুগান্তকারী প্রস্তাব আইনের বিশেষ দিক
অহিংসের নোয়াখালী সংগঠক তানজিলা আক্তার বলেন, এই আইনটি মূলত অবৈধ ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার করে পুঁজিহীন ও স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তা, উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের
বিনা সুদে, বিনা জামানতে সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য পুঁজি দিয়ে উৎপাদন ও সেবা খাতের সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয়বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে একটি ন্যায় ও ন্যায্যতা ভিত্তিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে করা। অহিংসের কেরানীগঞ্জ সংগঠক আনোয়ার এই আইনের দুটি অভিনব ধারণার কথা উল্লেখ করেন, যা সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন বা বিপ্লব ঘটাতে পারে।
প্রথমত, 'জাতীয় শত্রু' ঘোষণা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তকরণ:
দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতিবিদ, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, লুটেরা ও বিদেশে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচারকারীদের 'জাতীয় শত্রু' ঘোষণা করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। তাদের সকল অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে বলা হয়েছে এলাকা ভিত্তিক 'গণশুনানী' ব্যবস্থার মাধ্যমে। এই গণশুনানীর কার্যক্রমে যেকোনো ব্যক্তি অপর অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনতে পারবেন এবং অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানীর মাধ্যমে দুর্নীতির অর্থ-সম্পদ উদ্ধার করা হবে।
দুর্নীতি প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পত্তির যে অংশটুকু দুর্নীতির মাধ্যমে আহরণ করা হয়েছিল, সেইটুকু "অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা"-এর পক্ষে বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং যে ব্যক্তি এই অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্বন্ধে তথ্য দেবেন, তাকে পুরস্কার হিসাবে বাজেয়াপ্ত অর্থের ১ শতাংশ দেয়া হবে। দুর্নীতি প্রমাণ না হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ নির্দোষ হিসেবে খালাস পাবেন, কিন্তু যে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন, তাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাজা প্রদান করা হবে। দুর্নীতির অভিযোগ প্রাপ্ত ব্যক্তি যদি দুর্নীতির টাকা পরিশোধ করে আগেই স্বীকৃতি দেন, তার জন্যও এই আইনে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, 'গণমুখী বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল' গঠন: বাজেয়াপ্ত করা বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে
"গণমুখী বিশেষ বিনিয়োগ তহবিল" গঠন করতে বলা হয়েছে। ঋণ গ্রহীতা হিসেবে সমাজের তৃণমূলের মানুষদের কথা বলা হয়েছে – কৃষক, হকার, বেকার, ছাত্র, পরিবহন চালক, দোকানদার, ক্ষুদ্র-মাঝারী ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, কারখানা মালিকসহ নিম্ন ও মধ্য আয়ের নাগরিকেরা। এই ঋণ হবে জামানত ছাড়া, বিনা সুদে, দীর্ঘ মেয়াদে সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ। বিনিয়োগ খাত হিসেবে উৎপাদন, সেবা ও শিক্ষাসহ অন্যান্য খাতের কথা বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্নততর মর্যাদাপূর্ণ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করা যাবে। বক্তারা বিশ্বাস করেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ পুঁজি পেলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, সমাজে সমৃদ্ধি আসবে এবং প্রকৃত অর্থেই দেশ উন্নত হবে। সকল সংগঠক
লুন্ঠিত অর্থ উদ্ধার করবো, বিনা সুদে পুঁজি নিবো" স্লোগানে স্লোগান দেন।আইনের বাস্তবায়ন ধারা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউল করিম রিয়াজ আইনটির বাস্তবায়ন ধারা ব্যাখ্যা করে বলেন: আইনের পক্ষে দেশের এক দশমাংশ তথা ১ কোটি ৮০ লক্ষ জনগণের অনুস্বাক্ষর গ্রহণের মাধ্যমে আইনের প্রতি জনগণের সমর্থন প্রমাণিত হয়েছে, এবং সেহেতু সাংবিধানিকভাবে "অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা" শীর্ষক বিশেষ আইন পাশের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। সমাজের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ২১ সদস্যের "অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা" নামক রাষ্ট্রীয় সংস্থা গঠন। এই বিশেষ আইনের আওতায় পাড়ায়-মহল্লায় 'গণশুনানীর' মাধ্যমে লুটেরা, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, পাচারকারীদের 'জাতীয় শত্রু' ঘোষণা করে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং দেশে ও দেশের বাইরে পুঞ্জীভূত লক্ষ কোটি টাকা উদ্ধার করা। উদ্ধারকৃত অর্থ "অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা"-এর মাধ্যমে দেশের মালিক তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে বিনা সুদে, বিনা জামানতে, দীর্ঘ মেয়াদি সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য পর্যাপ্ত ঋণ প্রদান।ঋণ গ্রহীতার সাথে সহনশীলতার সাথে ঋণ আদায়ে কাজ করা।
রবিনহুড মডেল ও সরকারের ভূমিকা 'অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ'-এর সিনিয়র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার দেশ ও বিদেশ থেকে লুন্ঠিত টাকা পুনরুদ্ধারে যে প্রশংসনীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছে, সেখানে অহিংসের ১ কোটি ৮০ লক্ষ অনুস্বাক্ষরকারীর পরিবারকে তার শক্তি হিসেবে গ্রহণ না করে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা চরম অবিবেচনা প্রসূত এবং জনগণ তথা দেশের মালিকের শক্তিকে অবজ্ঞা করা। ব্রিটিশ লোককাহিনী 'এডভেঞ্চার অফ রবিনহুডে'র উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত, লুটেরা অনৈতিক বিত্তবানদের ঘোড়ারগাড়ি পথে গতিরোধ করে স্বর্ণমুদ্রা ছিনিয়ে গরিবদের মধ্যে বণ্টনকারী হিসেবে খ্যাত ছিল নায়ক রবিনহুড ও তার দল।
'দুর্নীতির অর্থ উদ্ধার করে তৃণমূলে পুঁজি বন্টন' এর অভিনব ধারণা এবং তার জন্য গ্রামেগঞ্জে দৌড়িয়ে ১ কোটি ৮০ লক্ষ অনুসমর্থন নিয়ে ফেলার মতো অসম্ভব কর্মযজ্ঞের জন্য অহিংস পরিবারকে বাংলার তৃণমূলের রবিনহুড স্বীকৃতি না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ সরকারের বিবেচনা, রুচির অবক্ষয় ও বিবেকের চরম দুর্নীতির প্রমাণ। অ্যাডভোকেট জিয়া আরও বলেন, সমাজের অতি উচ্চ তলার দুর্নীতির বিপুল অর্থ যা অপ্রয়োজনীয় ভোগ-বিলাসে ব্যয়িত হয় এবং পৃথিবী, প্রাণ-প্রকৃতির উপর অযথা চাপ ফেলে, তা যদি সমাজের নিম্নতম স্তরে বন্টন করা যায়, তবে যে অর্থনৈতিক বাস্তবতার উদ্ভব হবে, তা অভিনব ও বিশ্বে দৃষ্টান্তহীন।
ডক্টর মোহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মতো অহিংসের অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগও একটি কালজয়ী মতবাদ ও মডেল হিসেবে বিশ্বে আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে। ডক্টর ইউনূসের নতুন উপস্থাপিত '৩ শূন্য' মডেলের শূন্য দরিদ্র অভিকল্পেও অহিংসের উদ্যোগ ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে। এখন উচিত, সরকারের সুবিবেচনা প্রসূত সঠিক পদক্ষেপ।



